আমের মিষ্টতা ও ঘ্রাণের প্রেমে পড়েনি এ দেশে এমন মানুষ পাওয়া যাবে কি? একটা রসালো আম ভুলিয়ে দিতে পারে সব ক্লান্তি। যেমন মহাবীর আলেকজান্ডার ভুলে গিয়েছিলেন। পৃথিবী জয় করতে নেমে ভারতবর্ষ অবধি এসে মজে গিয়েছিলেন আমের রসে। তাই ফিরে যাওয়ার সময় আলেকজান্ডার ঝুড়িতে করে আম নিয়ে গিয়েছিলেন সুদূর গ্রিসে। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস বলে আমের ইতিহাস আরও পুরনো।
আম এ উপমহাদেশের এক নিজস্ব ফল। ভারতের কুউমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ড. ইন্দু মেহতার আমের ইতিহাস নিয়ে একটি গবেষণা পেপার পড়ছিলাম। সেখানে উল্লেখ আছে, হাজার বছরের আমের ইতিহাসের কথা। তবে ৬৩২-৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং যখন ভারতবর্ষে বেড়াতে আসেন, তখন পরিচিত হন এ অঞ্চলের ফল আমের সঙ্গে। প্রচলিত আছে- সে সময় তিনি ফল হিসেবে আমকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তোলেন। আমি এর আগে একটি লেখায় আম নিয়ে মুঘল সম্রাট আকবরের গল্পটি উল্লেখ করেছিলাম। সম্রাট আকবর তাঁর শাসনামলে ভারতের লাখবাগের দ্বারভাঙা এলাকায় প্রায় ১ লাখ আম গাছ রোপণ করেছিলেন। যেটিকে বলা হয় ভারতীয় উপমহাদেশে সবচেয়ে বড় আমবাগান।
এরপর পর্তুগিজরা এসে আমের রস ও গন্ধে মজে ওঠে। তারাই আমকে ছড়িয়ে দেয় সারা বিশ্বে। যেখানে যেখানে তারা কলোনি গড়েছে সেখানেই নিয়ে গেছে আমকে, গড়েছে আমের বাগান। ১৬০০ সালের মধ্যে আম পৌঁছে যায় মেক্সিকোয়, ১৮৩৩ সালে আমেরিকার ফ্লোরিডায়। এ জনপদের আম ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। বর্তমানে ৯০টির বেশি দেশে আমের ফলন হয়। আমের রসে মুগ্ধ পৃথিবীবাসী। আম জনপ্রিয় এক ফল। বিশ্বে কোটি কোটি টাকার আমের বাজার।
কয়েকদিন আগেও ধারণা করা হচ্ছিল ২০২৯ সালের বৈশ্বিক আমের বাজার হবে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি ইউএস ডলারের। আম উৎপাদনকারী প্রথম ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে আছে বটে কিন্তু আম রপ্তানিকারী প্রথম ২০ দেশের মধ্যেও বাংলাদেশ নেই। অথচ প্রতি বছর বাড়ছে আমের উৎপাদন। আম চাষিরা আগ্রহ নিয়ে প্রতি বছর আম উৎপাদন করে চলেছেন বড় একটি বাজার ধরবেন বলে। কিন্তু আমরা কেন বৈশ্বিক বাজারে আর সব শাকসবজি, ফলমূলসহ আম নিয়েও প্রবেশ করতে পারছি না? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে পাঠক, আপনাদের জানিয়ে রাখতে চাই, বছর দশেক আগেও এ দেশে প্রতিটি ফলের দোকান ভরে থাকত ভারতীয় আমে।
বাংলাদেশে প্রধানত ভালো জাতের আম হতো রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে। তা ছাড়া সারা দেশের মানুষের গৃহস্থ ভিটায় যেসব আম গাছ থাকত সেগুলো ছিল সাধারণ জাতের। মানুষ বিশ্বাস করত, রাজশাহী-চাঁপাই ছাড়া ভালো আম কোনো মাটিতেই সম্ভব নয়। এমন বিশ্বাস ছিল বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও। কিন্তু এ দেশের কৌতূহলী কৃষক বাণিজ্যিক কৃষির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গেই ফল উৎপাদনের বিষয়টিকে লাভজনক হিসেবে গ্রহণ করেছে। উদ্যোক্তা কৃষকের হাত দিয়ে ফলের রাজা আম ছড়িয়ে গেছে সারা দেশে। প্রচলিত বিখ্যাত জাতগুলোর পাশাপাশি আরও নতুন নতুন জাত এসেছে। দিনে দিনে সবখানে ছড়িয়ে গেছে আমবাগান। বাংলাদেশে আম উৎপাদন প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে আমের বহুমুখী বাণিজ্যিকায়ন শুরু করে কৃষি শিল্প প্রতিষ্ঠান। মনে আছে, উত্তরাঞ্চলের মানুষ একসময় ‘আশ্বিনা’ আম নিয়ে বিপাকে ছিল। দাম পেত না।
দেশে প্রথমবারের মতো আম থেকে শিল্পপণ্য তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল প্রাণ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আমজাদ খানচৌধুরী। প্রায় পনের বছর আগে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে আপনাদের সামনে তুলে ধরেছিলাম নাটোরসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় জাতের টক আম ও আশ্বিনা আম কী করে যুক্ত হয় বাণিজ্যিক ধারায়। আগে যেসব আম গাছের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হতো, সেগুলোও হয়ে উঠল কৃষকের অর্থকরী পণ্য। আম এখন শুধু মিষ্টতায়, স্বাদে আমাদের মুগ্ধ করে না, বাণিজ্যেও বড় অঙ্কের কৃষি-অর্থনীতির স্বপ্ন দেখায়। আমাদের দেশে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হার কৃষি অর্থনীতিতে যে মাত্রা যোগ করেছে, সেখানে রপ্তানি সম্ভাবনারও একটি বড় অবদান রয়েছে। বেশ ক’বছর আগে থেকেই আমাদের দেশের আম বিচ্ছিন্নভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। স্থানীয় ছোট ছোট বাজারে, যেগুলোকে বলা হয় এথনিক মার্কেট, সেগুলোয় প্রবাসীদের মাঝে বিক্রি হয়ে আসছে। কিন্তু ইংল্যান্ড বা আমেরিকার হোলসেল মার্কেটগুলোয় বাংলাদেশের পণ্য আমি খুঁজে পাইনি। ২০১৫ সালে প্রথম আনুষ্ঠানিক আম রপ্তানির একটি দ্বার উন্মোচিত হয়।
বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্যের বাজারে আম রপ্তানি শুরু হয়। আম রপ্তানির প্রথম চালান যুক্তরাজ্যের ওয়ালমার্ট চেইনশপে পৌঁছায়। আমের রপ্তানি বাজার উন্মুক্ত করার পেছনে বড় ভূমিকাটি ছিল বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও)। এফএওর তৎকালীন প্রতিনিধি মাইক রবসন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, হর্টেক্স ফাউন্ডেশনকে সঙ্গে নিয়ে আম রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল এসে দেশের আম উৎপাদনকারী এলাকা সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী পরিদর্শন করেন। নয়টি জাতের আমের নমুনাও পাঠানো হয়। সেখান থেকে তারা তিনটি জাত- হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি বাছাই করেন। এ সময়টিতে আমকে ঘিরে এক বিরাট বাণিজ্য সম্ভাবনা দানা বাঁধে। হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকেও রপ্তানি উপযোগী আম উৎপাদন, ব্যাগিং পদ্ধতির ব্যবহার ও সচেতনতা নিয়ে একাধিক অনুষ্ঠান করি। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষিদের নিয়ে নানাবিধ পরামর্শ সভা ও বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
আমরা শুধু আমের বাণিজ্য সম্ভাবনা নিয়ে রাজশাহীতে ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’-এরও আয়োজন করি। সে আয়োজনেই কৃষক তুলে ধরেন আমের ‘ফ্রুট ফ্লাই’ সমস্যার কথা। ২০১৪-১৫ সাল থেকে টানা কয়েক বছর আম রপ্তানি কার্যক্রম চলেছে। কিন্তু তারপর আকস্মিকভাবেই থমকে যায় এ উদ্যোগ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, ২০১৪-১৫ সালে যেখানে ৭৮৮ টন আম রপ্তানি হয়, সেখানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৮৮ টনে নেমে আসে এবং তারপর কমতে কমতে প্রায় শূন্যের কাছাকাছি পরিমাণে এসে পৌঁছে। আমের রপ্তানি বাণিজ্যে এ ভাটার পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ আমাদের গাফিলতি। আমি কথা বলেছি যারা ওয়ালমার্টে প্রথম আম রপ্তানিতে অংশ নিয়েছিলেন তাদের কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলেছেন কীভাবে একটা সম্ভাবনা মুকুলেই নষ্ট করে দেওয়া হয়। কৃষক ও রপ্তানিকারকদের মাঝখানে থাকা কিছু মানুষের অসততার কারণেই একটা সম্ভাবনার দ্বারে প্রথম আঘাত আসে। কৃষক জানায়, তারা যে মানের আম দেন, তার সঙ্গে বাইরে থেকে কেনা আম মিশিয়ে কোয়ালিটি নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল। এমনও হয়েছে, তাদের কাছ থেকে আম না নিয়েই আম রপ্তানি সম্পন্ন করে ফেলেছে।
পাঠক! আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলে রাখতে চাই, আন্তর্জাতিক হোলসেল মার্কেটগুলোয় কৃষিপণ্য রপ্তানি করতে চাইলে অবশ্যই গ্যাপ (গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস) সার্টিফাইড হতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশে পণ্য পাঠাতে চাইলে উৎপাদন থেকে প্যাকেটজাতকরণে ইইউর কমপ্লায়েন্স মেনে করতে হবে। এ রপ্তানি কার্যক্রমের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের উদাসীনতা, ইচ্ছার অভাবের কারণে এখন পর্যন্ত গ্যাপ সার্টিফিকেটপ্রাপ্তির বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি। যা হোক, বলছিলাম ওয়ালমার্টের সঙ্গে আম পাঠানোর চুক্তিটা কীভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে সেই কথা। ওয়ালমার্টের সঙ্গে চুক্তি ছিল লন্ডনের জামিল আহমেদের। তিনি এক বছর আগে থেকেই ওয়ালমার্টের ৭০০ টন আমের প্লেস বুকিং দিয়ে রাখেন। ওয়ালমার্টও চুক্তি অনুযায়ী প্লেস খালি রাখে এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশের দ্বীপ ইন্টারন্যাশনালকে রেজিস্ট্রার করে এবং শর্ত অনুযায়ী দ্বীপ ইন্টারন্যাশনাল আম পাঠানোও শুরু করে। ৪-৫ টন আম পাঠানোর পর দ্বীপ ইন্টারন্যাশনাল ওয়ালমার্টে আম পাঠাতে ব্যর্থ হয়। কারণ জানতে কথা বলি দ্বীপ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী পরিতোষ চন্দ্র দাস মানিক বাবুর সঙ্গে। তিনি জানান, হঠাৎ করে অন্য দেশের একটি এথনিক মার্কেটে রপ্তানি করা সবজিতে ফ্রুট ফ্লাই থাকার কথা বলে সরকারের কৃষিপণ্য রপ্তানির কোরাইন্টাইন বিভাগ দ্বীপ ইন্টারন্যাশনালের কৃষিপণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ফলে তার পক্ষে আর ওয়ালমার্টে আম পাঠানো সম্ভব হয় না। প্রসঙ্গতই আমি কথা বলি ওয়ালমার্টের সঙ্গে চুক্তিকারী জামিল আহমেদের সঙ্গে। তিনিও জানান, ফলের মান নিয়ে ওয়ালমার্টের প্রশ্ন ছিল না। এফএওর প্রতিনিধি চিঠিতে লিখে দিয়েছিলেন আমের উৎপাদন কমপ্লাইন্স মেনে মানসম্পন্নভাবেই হয়েছে। এতে ওয়ালমার্ট সে বছরের জন্য আম নিতে রাজি হয়, কিন্তু পরের বছর অবশ্যই গ্যাপ সার্টিফিকেট লাগবে এ কথাও জানিয়ে দেয়। কিন্তু সবচেয়ে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় হঠাৎ করে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান দ্বীপ ইন্টারন্যাশনালের রপ্তানি করার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া। এর ফলে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হন জামিল আহমেদ। পাশাপাশি বাংলাদেশের আম রপ্তানির বড় একটি সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়। সে সময় হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের কনসালট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ড. সালেহ আহমেদ। তিনি জানান, গ্যাপ সার্টিফিকেশনের জন্য তিনি চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু একক প্রচেষ্টায় অন্যান্য দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করা সম্ভব হয়নি। আম রপ্তানির পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছি হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ মনসুরুল হান্নানের সঙ্গে। প্রশ্ন ছিল, পাঁচ বছরেও একটি সার্টিফিকেশনের আওতায় কৃষিপণ্যকে আমরা আনতে পারিনি কেন? তার কথায়ও বোঝা গেল, মাঠ পর্যায়ে সমন্বয় করাটাই কঠিন। সর্বশেষ বিষয়টি জানতে ও জানাতে কথা বলি কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি সরলভাবেই জানিয়েছেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি জানতেন না। কেউ তাকে জানায়ওনি। সম্প্রতি জানার পর তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন। আশা করছেন খুব শিগগিরই গ্যাপ সার্টিফিকেশনের জটিলতা কেটে যাবে। গত বছর কৃষি মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত তাদের দেশে বাংলাদেশের আমদানির আগ্রহের কথা জানান। তবে জাপানের রাষ্ট্রদূত মি. নাওকি ইটো শর্ত দেন ফ্রুট ফ্লাই কিটমুক্ত আম হতে হবে। সে প্রক্রিয়া কতদূর অগ্রসর হয়েছে তাও মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। এ ব্যাপারেও তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, প্রক্রিয়া চলছে।
বহু আগে থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের কৃষিপণ্য উপেক্ষিত। রপ্তানির জন্য আমাদের আন্তরিকতাও একসময় ঝিমিয়ে পড়েছে। আমি গত এক দশকে ইংল্যান্ড তথা ইউরোপের বিভিন্ন হোলসেল মার্কেটে আমাদের কৃষিপণ্য খুঁজেছি। কিন্তু বারবারই হতাশ হয়েছি। আফ্রিকার ছোট্ট কোনো দেশ থেকেও পণ্য আসে কিন্তু আমরা সেখানে আমাদের পণ্য নিয়ে ঢুকতে পারি না। ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের সবচেয়ে বড় হোলসেল মার্কেটে গিয়ে জানলাম সে দেশের কৃষি ও খাদ্যের নিরাপত্তা বিধানকারী প্রতিষ্ঠান ডেফরার যথেষ্টই আন্তরিকতা রয়েছে আমাদের দেশের কৃষিপণ্যের ব্যাপারে, কিন্তু আমরা বারবারই তাদের বেঁধে দেওয়া নিয়ম ভঙ্গ করে চলেছি। আমাদের দেশের লেবু ও পানের ক্ষেত্রে সেই একই ঘটনা বারবার ঘটেছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের অক্টোবরে আমি ইংল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলের একটি হোলসেল মার্কেটে গিয়েও আরও হতাশাজনক চিত্র খুঁজে পাই। দেখলাম সেখানে আমাদের দেশের পান ঠিকই পৌঁছে, কিন্তু তা আমাদের প্রতিবেশী দেশের পরিচয়ে। আমের ক্ষেত্রেও সেই একই হতাশা আমাদের গ্রাস করেছিল। গত এক দশকে আমরা ফল উৎপাদনে বিরাট এক সাফল্য অর্জন করেছি। ২০১৪-১৫ সালে আম রপ্তানি শুরু হতেই পৃথিবীতে আম রপ্তানিতে আমরা অষ্টম স্থানে পৌঁছে যাই। কিন্তু তার পরই থমকে যায়। করোনা পরিস্থিতি পৃথিবীর সামনে অনেক অনিশ্চয়তা টেনে এনেছে।গোটা পৃথিবী এক মহামারী ও দুর্ভিক্ষের শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছে। এ অবস্থায়ও কৃষিতে বহুমুখী সাফল্যের জায়গা থেকে আমরা আশার আলো দেখতে পাই। কিন্তু এ আশার আলো জ্বালিয়ে রাখতে পৃথিবীবাসীর মুখে খাদ্য পৌঁছে দিতে আমাদের অংশ নিতে হবে। বহুমুখী উদ্যোগ নিতে হবে। খাদ্য ও পুষ্টির প্রশ্নে আমদানিনির্ভর দেশগুলোর চাহিদা পূরণে আমাদের তৎপর হতে হবে। এখানে সর্বোচ্চ কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক তৎপরতা দেখাতে হবে আমাদের। সৃষ্টি করতে হবে রপ্তানি বাজার। যেসব পণ্য রপ্তানিতে প্রশ্ন আছে, সেসব প্রশ্ন দূর করার জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে তৎপর হতে হবে সরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে। আশা করব সরকার আমসহ সব মৌসুমি ফলের রপ্তানি বাণিজ্যের দ্বার আবার উন্মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।
shykhs@gmail.com